নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ার ও জেগে উঠা ভূমি সংক্রান্ত আইন



সিকস্তি (Diluvion Lands) ডাইলভিয়ন ল্যান্ডস:
কোন ভূমি ভেঙ্গে নদী বা সাগর গর্বে বিলীন হয়ে গেলে ইহাকে সিকস্তি (Diluvion) বলে।
পয়স্তি ভূমি (Alluvion Lands-এলোভিয়ন ল্যান্ডস): সাগর বা নদীতে কোন ভূমি জেগে উঠলে বা ভেঙ্গে যাওয়ার ভূমি পুনরায় জেগে উঠলে এরূপ ভূমিকে পয়স্তি বলে।
১৯৯৪ সনের ১৫ নং আইন বলে সাবেক ৮৬ ধারা সংশোধন করে তদস্থলে নিম্নরূপ সংশোধনি ৮৬ ধারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ১৩ জুলাই ১৯৯৪ ইং তারিখে রাষ্ট্রপতি সম্মতি লাভ করে ইহা আইনে পরিণত হয়েছে।
স্টেট একুইজিসন এন্ডটেন্যান্সী এ্যাস্ট ১৯৫০ এর ৮৬ ধারা : সিকস্তি (Diluvion)মূলে খাজনা মওকুফ ও পয়স্তি (Alluvion)মুলে পুঃন জাগরিত ভূমির স্বত্ব/অধিকার (Right) নির্ণয় ।

জমি ক্রয়বিক্রয়


ইস্ট বেঙ্গল এ্যাক্টনং-২৮/১৯৫১, স্টেট একুইজিশন টেন্যান্সি এ্যাক্ট ১৯৫০ এর ৮৮ ধারা অনুযায়ী। একজন রায়ত এই এ্যাক্টের বিধানের শর্ত সাপেক্ষে তার হোল্ডিং বা ইহার অংশ বা খন্ড তার অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তির ন্যায় হস্তান্তর করতে সক্ষম।
শর্ত হলো যে, ২০ ধারায়(২) উপধারা মোতাবেক, দখলে রাখা (Retained)চা বসাগনের খাস ভূমি-পূর্বাহ্নের ডেপুটি কমিশনারের লিখিত মজুরী ব্যাতীত হস্তান্তর করা যাবে না এবং প্রস্তাবিত হস্তান্তরের কোন মতেই সামগ্রীকভাবে বা–বাগানের অস্তিত্বকে বিনষ্ট(disrupt)করতে পারবে না বা কোন মতেই যে উদ্দেশ্যে ভূমি দখলে রাখা হয়েছে সেই চা চাষের কোন বিঘ্ন (affect) সৃষ্টি করতে পারবে না।
উক্ত এ্যাক্টের ৮৯ ধারার (১)উপধারায় নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত কৃষি ভূমির যে কোন রূপ হস্তান্তর রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে হতে হবে।
যে সকল ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রির প্রয়োজন নেই:
১। আদালতের ডিক্রির বলে বিক্রয় হলে
অথবা
২। সরকারী দাবী বা পাবলিক দাবী আদায়ের জন্য বেঙ্গল পাবলিক ডিমান্ড রিকভারী এ্যাক্ট, ১৯১৩ এর আওতাধীন দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মোকদ্দমা মূলে ভূমি নিলামে বিক্রি বা ক্রয় করা হলে । এবং
(গ)উইল (Bequest)মূলে।
কৃষি ভূমির মালিক: টেস্ট একুইজিশন এন্ড টেন্যান্মি এ্যাক্টের ৮১ ধারার (১) উপাধারর কোন এলাকাল এই অংশের সবটুকু বলবৎ হওয়ার তারিখ হতে সেখানে কৃষি ভূমির মাত্র এক শ্রেণীর স্বত্ব দখলকার যথা “মালিক” খাকবে এবং এরূপ প্রত্যেক মালিকের অধিকার এবং দায় এই অংশের বিধান মোতাবেক নিয়ন্ত্রিত হবে। এই অংশ অর্থাৎ উক্ত এ্যক্টের ৫ম অংশের (৭৯ ধারা হতে ১৫২ ধারা পর্যন্ত) সবটাকু বহুপূর্বেই দেশের সর্বত্র জারী হয়ে বলবৎ হয়েছে। রায়ত, অধীনস্ত রায়ত ইত্যাদি শ্রেণীর দখলকারদের পরিবর্তে এক শ্রেণীর দখলকার যাহা “মালিক” হিসেবে অভিহিত হয়েছে।
অকৃষি ভূমি : উক্ত এ্যাক্টের ৮১ এ ধারার (১) উপধারা, এই অংশে (৫ম অংশ)অন্য কোন রূপ ব্যবস্থা থাকা ব্যতীত অকৃষি ভূমির দখলকার যিনি এই এ্যাক্টের বধিামসমূহের আওতায় এরূপ ভূমির উপরিস্থ স্বত্ব দখল হওয়ার দরুন সম্পর্কের অধীনে প্রজা হয়েছেন তার অধিকার আদায়(Liabiliaties)যে এরূপ দখলের (একুইজিশনের) সময় ইষ্ট বেঙ্গল সব এগ্রিকালচারা টেন্যান্সি এ্যাক্ট ১৯৪৯ এরূপ ভূমির ক্ষেত্রে প্রয়োগ হতো ইহা সেই এ্যাক্ট এর বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত (Regulated)হবে।        

নামজারি (Mutation)



মিউটেশন(Mutation) ইংরেজী শব্দের বাংলা শব্দ হল পরিবর্তন। এখানে খতিয়ানে নাম লেখনভুক্ত করা বা জমিজমার ভাগ বা পরিবর্তনকে বুঝায়। পূর্বেই কলা হয়েছে যে প্রতি মৌজা জরিপ বিভাগ কর্তৃক খতিয়ান প্রস্তুত করার পর নানা স্তরে ইহার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর খতিয়ানগুলোকে সরকার জ্ঞিপ্তির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ঘোষনা করে থাকেন।
এ সকল খতিয়ানে উল্লেখিত মালিকের নাম, তাদের হিস্যা, স্কত্ব ভূমির পরিমাণ ইত্যাদি। বিক্রী, মর্গেজ উত্তরাধিকার সূত্রে এবং যাবতীয় আইন অনুযায়ী হস্তান্তরসহ সকল উদ্দেশ্যে আইন আদালতসহ সর্বক্ষেত্রে বিবেচিত এ বাহ্য হয়ে থাকে। এক জরীপ হতে আরেক নতুন জরীপ পর্যন্ত প্রায় বিশ(২০) বৎসর সময়ের ব্যবধান। এই সময়ের মধ্যে খতিয়ানে লেখনভুক্ত মালিকের মৃত্যু অথবা বিক্রী ও অন্যবিধ কারণে ভূমি হস্তান্তর হওয়ার দরুন ভূমির মালিকানা স্বত্বের পরিবর্তন আবশ্যক। অন্যথায় বিক্রী, উত্তরাধিকার, মর্গেজ, খাজনা বা কর আদায় ইত্যাদি অসুবিধা হবে।

নামজারি ও খারিজের আইন
         
বর্তমানে মিউটেশনের দায়িত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর উপর ন্যাস্ত। (পূর্বে উপজেলা রাজস্ব অফিসার বা সার্কেল অফিসার রাজস্ব এর উপর ন্যাস্ত ছিল)।
নামজারি দু’প্রকারের হয়ে থাকেঃ
১। মূল খতিয়ানে নাম কর্তন করে ভূমি কিংবা নাম যোগ করে নাম জারি করে এবং
২। কোন খতিয়ানের কোন অংশীদার বা নতুন মালিক খতিয়ান হতে বের হয়ে বা খারিজ হয়ে স্বতন্ত্র খতিয়ান খুলতে চাইলে জমা ভাগ করে স্বতন্ত্র খতিয়ান খুল নামজারি করা হয়।
স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সী অ্যাক্টর ১১৬ ধারা মোতাবেক কোন মালিকের একই মৌজায় অবস্থিত তার বিভিন্ন খতিয়ানভুক্ত বিভিন্ন দাগের ভূমি রাজস্ব অফিসারের যজ্ঞ বিক্রয়ের একটি খতিয়ানে একত্রিত বা সমন্বিত করতে পারেন এবঙ উক্তর অ্যাক্টের (১১৭ ধারার ৯১) উপধারা (সি)অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন একান্নভুক্ত খতিয়ানকে ভাগ করে স্বতন্ত্র খতিয়ান খুলতে পারেন এবং ভাগ করতে হলে রাজস্ব অফিসারের কাছে উক্ত খতিয়ানের এক বা একাধিক অংশীদারগণের আবেদন করতে হবে।
ধার-১১৬: যদি একই গ্রামে বিভিন্ন ভূমি খন্ড একজন মালিকের স্বত্বাধীন হয় এবং ইহা বিভিন্ন খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত খাকলে এরূপ ভূমি খন্ডসমূহ রাজস্ব কর্মকর্তার আদেশ বলে একটি খতিয়ানে একত্রিভুক্ত করা যাবে।
শর্ত হলো যে রাজস্ব অফিসার কর্তৃক এরূপ একত্রিভুক্তির আদেশ করা হবে না যদি মালিকের ইহাতে কোন আপত্তি থাকে এবং উক্ত অফিসারের নিকট যুক্তিসঙ্গত ও যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান।
ধারা-১১৭(১): এই অংশের অন্যত্র অন্য কিছু থাকা স্বত্বেও রেভেনিউ অফিসার (এ)১১৬ ধারা অনুযায়ী জোতগুলি(টেন্যান্সি) একত্রিকরনের উদ্দেশ্যে স্বউদ্যোগে অথবা তার বরাবর এক বা একাধিক অংশীদার এতোদ্দেশ্যে আবেদন করিলে কিঙবা বি ১১৯ ধারা অণুযায়ী কোন মালিকের হোল্ডিংগুলো একত্রিত করণের উদ্দেশ্যে রেভিনিউ অফিসার স্বউদ্যোগে অথবা তার বরাবরে এতোদ্দেশ্যে আবেদন করলে কিংবা।
(সি) খাজনা ভাগ করার জন্য একান্নভুক্ত জোত ভাগ করার উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক অংশীদার টেন্যান্ট তার বরাবরে আবদেন করলে, অংশীদার টেন্যান্টদের মধ্যে একান্নভুক্ত জোতের এরূপ বিভক্তির এবং বকেয়া সহ যদি থাক খাজনা যেরূপ ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত বিবেচিত হবে সেভাবে বন্টনের জন্য (রেভিনিউ অফিসার)লেখিত আদেশ দ্বারা নির্দেশ দিবেন।
কিন্তু শর্ত হলো যে, উপস্থিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুনানি গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন আদেশ প্রদান করা যাবে না।
আরও শর্ত থাকে যে: উপরোক্ত (সি) অনুচ্ছেদের আওতাধীন কোন আদেশ হলে এবং এরূপ খাজনা বন্টনের ফলে কোন জোতের খাজনা ১.০০(এক) টাকার নিম্নে হলে ইহাকে ১.০০ টাকায় পরিণত করতে হবে অর্থাৎ ১.০০(এক) টাকার নিম্নে কোন জোতের খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করা হবে না।
(২) এই উপধারাটি ১৯৭৬ সনের ই,পি অধ্যাদেশ নং৮(E.P.order VIII of 1967)এর (১৯)ধারা মূলে দেওয়া হয়েছে।
(৩)উপধারা: ১১৭ ধারা ১ উপধারাধীন কোন একান্নভুক্ত হোল্ডিং বিভক্তির আদেশ হলে এরূপ বিভক্তি। ভূমির উপর চিহ্নিত (domareated) করতে হবে এবং ক্যাডাস্ট্র্যাল (Cadastral)করিপের ম্যাপ ইহা প্রদর্শন করতে হবে।

খতিয়ান

খতিয়ানঃ
খতিয়ানের অর্থ হইল “হিসাব”।সাধারণভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জরীপ বিভাগ কর্তৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, হিস্যা(অংশ) এবং তাদের স্বত্বাধীন দাগসমূহের নম্বরসহ বূমির পরিমাণ, ম্রেণী, এদের জন্য দেয় খাজনা ইত্যাদি বিবরণ সহ ক্রমিক সংখ্যা  অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাদের প্রত্যেকটিকে খতিয়ান বলা হয় এবং উক্ত রেকর্ডকে স্বত্ত্বের রেকর্ড বা রেকর্ড অব রাইটস(ROR)বলা হয়।
এব বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিমাণ ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে স্মরনীয় বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে “খতিয়ান” বলে।
খতিয়ানগুলো ১,২,৩,৪,৫ ইত্যাদি ক্রমিক সংখ্যা দ্বারা সাজানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক খতিয়ানে একটি সংখ্যা রয়েছে। ইহাদেরকে খতিয়ান নম্বর বলা হয়। প্রত্যেক মৌজার খতিয়ান ১(এক) হতে শুরু হয়। কোন কোন মৌজার কয়েক হাজারের বেশি থাকতে পারে। কোন মৌজার কতটি খতিয়ান রয়েছে তা উক্ত স্বত্বের রেকর্ড (ROR) পাওয়া যায়।

খতিয়ান প্রস্ততের ইতিহাসঃ
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অর্জন ও প্রজস্বত্ব আইনের চতুর্থ অধ্যায় অর্থাৎ ১৭ হতে ৩১ ধারায় খতিয়ান প্রস্তুতকরণ সম্পর্কিত বিধিবিধান রয়েছে। ১৭ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারা অনুযায়ী সরকারকে কোন জেলা, জেলার অংশ অথবা স্থানীয় এলাকার ক্ষেত্রে খতিয়ান প্রস্তু করার জন্য অথবা ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে প্রস্তুতকৃত ও চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান পরিমার্জন করার জন্য ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। 

২ নম্বর উপধারয় বলা হয়েছে যে, যদি ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে প্রস্তুতকৃত ও চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান পরিমার্জন করার জন্য ক্ষমতা প্রদাণ করা হয়েছে।
২নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, যদি ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রাজাস্বত্ব আইন অথবা ১৯৩৬ সালের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী খতিয়ান প্রস্তুতের জন্য আদেশ প্রদান করা হয়ে থাকে কিক্ত খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় নি কিংবাঐ খতিয়ান চূড়া্তভাবে প্রকাশিত হয় নি তাহলে ঐ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে এবং এ আইনের বিধান অনুযায়ী প্রস্ততি করতে হবে। আরও একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে, ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রাজস্বত্ব আইনে আমরা ১৯৩৬ সালের সিলেট প্রাজস্বত্ব আইনে যদি খতিয়ান প্রস্ততকরণের কোন কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়ে থাকে তাহলে এ অধ্যায় অনুসারে আরম্ভ করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে। 

এ আইনে ১৯ধারায় খতিয়ান প্রকাশ করার ভিভিন্ন পদক্ষেপ বর্ণনা করা হয়েছে। একটি খতিয়ানে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে তার বিবরণ ১৮ ধারায় রয়েছে। সে মোতাবেক খতিয়ান প্রস্তুত করা হলে বা সংশোধন করা হলে রাজস্ব অধিকার খসড়া খতিয়ান জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করবেন। অতঃপর এ সম্পর্কে কোন আপত্তি থাকলে রাজস্ব অধিকার তা নিষ্পত্তি করবেন। রাজস্ব কর্মকর্তার আদেশে সন্তুষ্ট না হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সরকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের পদের নিচে নয় এমন রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট আপিল করবেন। তার সিদ্ধান্তেও সন্তষ্ট না হলে ৫৩ ধারা অনুযায়ী বিশেষ জজের নিকট আপিল করা যাবে এবং সেখান থেকে দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৫ ধারা অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাবে।
সকল ধরনের সম্পত্তি ও আপিল নিষ্টত্তি করা হলে রাজস্ব কর্মকর্তা চূড়ান্ত রূপে খতিয়ান প্রকাশ করবেন। রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালা ২৫ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, রাজস্ব কর্মকর্তা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান বিনামূল্যে পরিদর্শনের জন্য সুবিধাজনক স্থনে কিছু দিনের জন্য উন্মুক্ত রাখবেন।
রাজস্ব কর্মকর্তা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান ও তারিখ বর্ণনা করে সার্টিফিকেট প্রদাণ করেন যা খতিয়ানের চূড়ান্ত সাক্ষ্যরূপে পরিগণিত হবে।

খতিয়ানের প্রকারঃ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪ ধরনের খতিয়ান রয়েছে। যথা – (১)সি,এস খতিয়ান, (২)এস, এ খতিয়ান, (৩)আর, এস খতিয়ান, (৪)বি, এস খতিয়ান/সিটি জরিপ।
(১)সি, এস খতিয়ানঃ ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৪০ সালে সরকার জরিপের মাধ্যমে যে খতিয়ান প্রস্তত করেন তাকে সি, এস খতিয়ান বলে। (নমুনা চিত্র )।
(২)এস, এ খতিয়ানঃ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২৭ হতে ৩১ ধারা অনুযায়ী ১৯৫৬-৬০ সালে যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তাকে এস,এ (State Acquision) থতিয়ান কলে। (নমুনা চিত্র)
(৩)আর,এস খতিয়ানঃ এই আইনের ১৪৪ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেন এরূপ খতিয়ানকে বলা হয় আর,এস খতিয়ান(Renisional Survey) (নমুনা চিত্র)
(৪)বি,এস খতিয়ান/সিটি জরিপঃ১৯৯৮-৯৯ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে বি, এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ বলে। যাহা এখনো চলমান ।

খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহঃ
খতিয়ানে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালার ১৮ নম্বর বিধিতে বিবৃত হয়েছে। এ বিধি অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিবরণসমূহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(ক)প্রজা বা দখলদারের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
(খ)প্রজা বা দখলদার কোন শ্রেণীল অন্তর্ভুক্ত ।
(গ)প্রজা বা দখলদর কর্তৃক জমির অবস্থান শ্রেণী, পরিমান ও সীমানা।
(ঘ)প্রজার জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
(ঙ)এস্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
(চ)খতিয়ান প্রস্তুতের সময় খাজনা এবং ২৮,২৯,৩০ বিধি মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা।
গোচরণ ভূমি, বনভূমি ও মৎস খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ।
(জ)যে পদ্ধতিতে খাজনা ধার্য করা হয়েছে তার বিবরণ ।
(ঝ)যদি খাজনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে যে সময়ে ও যে যে পদক্ষেপে বৃদ্ধি পায় তার বিবরণ ।
(ঞ)কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে প্রজা কর্তৃক পানির ব্যবহার এবং পানি সরবরাহের জন্য  যন্ত্রপাতি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষেণ সম্পর্কিত প্রজা ও জমির মালিকের মধ্যে অধিকার ও কর্তব্যের বিবরণ।
(ট)প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত বিশেষ শর্ত ও তার পরিনতি ।
(ঠ)পখ চলার অধিকার ও জমির সংলগ্ন অন্যান্য ইজমেন্টের অধিকার।
(ড)নিজস্ব জিম হলে তার বিবরণ ।
(ঢ)২৬নং ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা।
এছাড়া একটি খতিয়ানে তার নিজস্ব খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বাট্টা নম্বর, এরিয়া নম্বর, মৌজা নম্বর ও জে, এল, নম্বর থাকে।

জমি ও সম্পত্তি হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশনের সংশোধিত আইন


ভূমি ও সম্পত্তি হস্তান্তরের পদ্ধতি ব্যাপক সহজতর করার লক্ষ্যে আমাদের দেশের শত বর্ষের আইনের ব্যাপক সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনের ফলে আমাদের দেশের জনগণের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন, প্রি-এমশনে পাওয়া আদালতের দলীল রেজিস্ট্রেশন, বায়নানামা রেজিষ্ট্রেশন, বন্ধকি সম্পত্তির  রেজিষ্ট্রেশন করতে ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হবে। গত ১ জুলাই ২০০৫ থেকে উপরোক্ত কর্মকান্ডে সংশোধিত বিধি বিধান অনুসরণ করা হচ্ছে। 

দলিল লিখনের ক্ষেত্রে আগে ভেন্ডারগণ কোন বাধাধরা নিয়ম ছাড়াই তাদের ইচ্ছেমত লিখতেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় দলিলে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য বাদ পড়তো এবং অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় উপস্থাপিত হতো। নতুন এই নিয়মে এই সমস্যাটি আর হবে না। এখন ভেন্ডারদের থেকে স্টাম্প ক্রয় করে তাতে তাদের দ্বারা সরকারীভাবে সরবরাহকৃত নির্দিষ্ট ফরমেট বা ছকে লিখে বা টাইপ বা কম্পিউটার কম্পোজ করে(পৃঃ২৬১ দ্রঃ) রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। 
সরকার ১৮৮২ সালের ভূমির রেজিস্ট্রশন আইন, ভূমি হস্তান্তর আইন, ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এবং ১৯০৮ সালের তামাদি আইন সংশোধন করেছেন। শত বছরের পুরাতন আইন কানুন সম্পূর্ন বাদ না করে ভূমি ব্যবস্থাপনা সহজী করার জন্য এর ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয় এবং তা জুলাই ০১, ২০০৫ তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়। এ সংশোধনের ফলে এখন থেকে সব ধরনের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার ভূমি হস্তান্তরের জন্য  সার্বজনীন দলিল তৈরীর একটি নির্দিষ্ট ফরমেট বা ছক প্রকাশ করেছে। সারা দেশে দলিল তৈরীর ক্ষেত্রে এই একই ছক ব্যবহৃত হবে। এই আইনের গুরুত্বপুর্ণ সংশোধনগুলো হলো-

জমি ও আন্যান্য সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল ও রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম



ভূমি ও অন্যান্য সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য দলিলের ছক বা ফরমেট:

  • ভূমি হস্তান্তরের দলিল স্ট্যাম্পের উপর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত নির্দিষ্ট ফরমেট বা ছক অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। এই ছকে ক্রেতা-বিক্রেতার ছবি সংযোজনের নতুন বিধান রাখা হয়েছে।
তামাদি হওয়ার সময় সীমা
  • তামাদি হোয়ার সময়-সীমা তিন বছর থেকে এক বছর করা হয়েছে। দলিল তৈরী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময়
  • দলিল তৈরী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মৌখিক দান বা হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন।
  • মুসলিম পারিবারিক ধর্মীয় আইন অনুযায়ী স্তাবর সম্পত্তি মৌখিক দান বা হেবা দলিলো এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই দলিল হবে ঘোষণামূলক। এর জন্য ফি হবে মাত্র ১০০=(একশত) টাকা।
হেবা বা দান কে কাকে করতে পারে:-
  • হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী থেকে নাতি-নাতনী ও নাতি-নাতনী থেকে নানা-নানী সম্পর্কের মধ্যে হেবা দলিলে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এই নাম মাত্র ১০০ (একশত) টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন:-
  • উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। তবে এক্ষেত্রে ওয়ারিশগণের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্টেশন করার প্রয়োজন নেই।

সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন:-
  • সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ২০০ (দুইশত) টাকা থেকে ৫০০০(পাঁচ হাজার) টাকা। আগে যা ছিল ৫০০(পাঁচশত) টাকা থেকে ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকা। এর ফলে বন্ধকি সম্পত্তি কেহ অন্যত্র বিক্রয় করে প্রতারণা বা জালিয়াতির আর কোন সুযোগ পাবে না।

আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্রক্রয় সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন:-

  • আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্র ক্রয় দলিলও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বায়না চুক্তির রেজিস্ট্রেশন ও ফি:-
এখন থেকে বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য বায়নার ক্ষেত্রে ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৫০০/-(পাঁচশত) টাকা এবং ৫ লক্ষ টাকার অধিক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১,০০০/-(এক হাজার) টাকা। ৫০ লক্ষ টাকার অধিকমূল্য সম্পত্তির জন্য ২,০০০/-(দুই হাজার) টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে। বায়না নামা রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়া চুক্তি বলবৎ করতে আইনগত কোন সুবিধা পাওয়া যাবে না। আবার বায়নার অবশিষ্ট টাকা জমা না করা হলে কোন মামলা মোকদ্দমা করা যাবে না। সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়নানামা চুক্তির ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ১লা জুলাই ২০০৫ থেকে এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে যেসব বায়না হয়েছে কিন্তু এখনও রেজিস্ট্রেশন হয় নাই সেগুলো ১ জানুয়ারি ২০০৬ এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আবার বায়নানামা রেজিস্ট্রেশন না করা এসব চুক্তি কার্যকর বা বাতিল করতে হলে রেজিস্ট্রশনের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ৬ মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল ৩ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

বিঃ দ্রঃ ভবিষ্যতে মামলা মোকদ্দমা থেকে পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পূর্বে পুরুষদের আপসে সম্পত্তি বন্টনের দলিল রেজিস্ট্রেশন বার্ধমূলক করার ফলে ওয়ারিশদের ভোগান্তি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। মাত্র ২০-(বিশ) টাকা মূল্যের স্ট্রাম্পে দলিল করে তা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে এবং সর্বোচ্চ অংশ প্রাপ্ত অংশীদারের সম্পত্তির হিসাব থেকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণের অংশীদারদের ভগে পাওয়া সম্পত্তির মূল্য মানের শতকরা আড়াই ভাগ টাকা সব অংশীদারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ নেওয়া হবে।

হস্তান্তরিত অকৃষি ভূমির ব্যাখ্যা



অকৃষি ভূমি বলতে-ভূমি ও তদস্থিত বাড়ীঘর দালান-কোঠা সহ যা ভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে হস্তান্তর করা হয়েছে, উভয়ের মূল্য এক বা একত্রে ধরা হয়েছে এবং অভিন্ন এরুপ প্রি-এমশনের অধিকার ভূমিসহ বাড়ীঘর অন্তর্ভুক্ত। মোঃ আরাবুল্লাহ বনাম দুর্গাপ্রসাদ ত্রিবেদী পিএলডি-১৯৬০ ঢাকা ২৪৯ এবং ভূমির সংঞ্জা (২) ধারার (১৩) অনুচেছদ।

জমি ক্রয়-বিক্রয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় পরামর্শ


কথায় আছে “পয়সা দিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ কিনতে চায় কে?” তাই ভূমি ক্রয়ের সময় সম্ভাব্য সকল যুক্তিসঙ্গত সতর্কতা অবলম্বন ও অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। 

জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রেতাকে যে প্রধান বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক হতে হবে তা হলো:
 

কেবল ভূমির মালিকই তার ভূমি যে কোন ভাবে হস্তান্তর করতে পারেন। তাই হস্তান্তরকারীর মালিকানা ও দখলীয় স্বত্ব এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বৈধ কাগজ পত্র স্বাপেক্ষে ভাল করে দেখার প্রয়োজন।


১. বিক্রিত ভূমির সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে বিক্রেতার নাম আছে কিনা?



২. যদি বিক্রেতার নাম খতিয়ানে না থাকে তবে ভূমিতে বিক্রতার স্বত্ব বৈধ কাগজপত্র দ্বারা প্রমাণ করতে হবে।


৩. বিক্রির ভূমি (১) কোন মৌজায় অবস্থিত, (২) কোন খতিয়ান ও (৩) কোন দাগভুক্ত (৮) ইহার পরিমাণ এবং (৫) উক্ত খতিয়ানে ভূমিতে বিক্রতার অঙশ বা হিস্যা অনুয়ায়ী পরিমাণ ইত্যাদি ক্রয়ের পূর্বে কাগজ পত্র দ্বারা ভালভবে যাচাই করে দেখতে হবে।

ক্রয় দলিল দৃষ্টে ভূমি ক্রয় করতে হলে দেখতে হবে:

(ক) দলিলে উল্লেখিত (১) দলিলদাতা বা দাতাদের নাম ও (২) ভূমির বিবরন ও পরিমাণ সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে লেখনভুক্ত রয়েছে কিনা, যদি তার বা তাদের নাম সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে লেখনভুক্ত না হয়ে থাকে হবে খতিয়ানে লেখনভুক্ত মলিকের চাছ হতে বকভাবে তারা পেয়েছেন তা অবশ্যই কাগজ পত্রের মাধ্যমে দেখাতে হবে।
এরুপ খতিয়ানে লেখনভুক্ত মালিক কর্তৃক বিক্রি হবার পর উক্ত ভূমি যতবার বিক্রি হয়েছে এবং ইহার দরুন যতটি দলিল সমআদিত হয়েছে ততটি দলিল (পিট দলিল বা ধারাবাহিক দলিল) পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
অন্য কোন ব্যতিক্রম না থাকলে কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট খতিয়ানভুক্ত মালিক বা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীগণ ভূমি হস্তান্তর করতে পারেন। সুতরাং বিক্র বা মালিকানা স্বত্ব অর্জনের ধারাবাহিকতা অবশ্যই দেখতে হবে।

(খ) হাল খতিয়ান ও হাল দাগ চালু হওয়ার পূর্বেকার সমআদিত দলিলে উল্লেখিত খতিয়ান ও দাগ নম্বর, সাবেক দাগ ও খতিয়ানে নম্বরে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং দলিলে উল্লেখিত খতিয়ান, দাগ যাহা সাবেক খতিয়ান ও দাগ নম্বরে পরিণত হয়েছে ইহার সাথে বর্তমান চালু (হাল) খতিয়ান, দাঘ ও জমির পরিমাণের মিল আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।

(গ) বিক্রির পর ক্রেতার নামজারী না হওয়ার বিংবা ক্রেতা নাম জারী না করার দরুন এই সুযোগে বিক্রতা প্রতারণামূলক অন্যের বা ২/৩ জনের কাছে গোপনে বিক্রি করে থাকতে পারে। সুতরাং ক্রয়ের পূর্বে এই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে এবং অনুসন্ধান করতে হবে। এরুপ ঘটনা কখনো কখনো ঘটে থাকে।

(ঘ) বিক্রিত ভূমি বিক্রতার দখলে আছে কিনা তাও দেখতে হবে।

(ঙ) বকেয়া ভূমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করের জন্য ভূমি নিলামে বিক্রি হয়েছে কিনা অথবা নিলামে সরকার ক্রয় করে খাস করেছন কিনা তাও দেখতে হবে।

(চ) যে সকল হিন্দু নাগরিক তাদের জমি-জমা পরিত্যাগ করে বাস্ত্ত ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব লাভ করে বসবাস করেছেন তাদের অনেকের ভূমির অর্পিত ও অনাবাসী সম্পত্তি হসাবে তালিকাভূক্ত হয়েছে এগুলো সরকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
সুতরাং এরুপ হিন্দু মালিকদের ভূমি পরির্তক্ত হওয়ার দরনি কাস বা অর্পিত ও অনাবাসী সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়েছে কিনা তাও দেখতে হবে।

(জ) যে সকল মালিক ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা-যুদ্ধে বিরোধীতা করেছিল এবং তাদের ভূমি ও বাড়ী-ঘর ত্যাগ করে বাংলাদেশ হতে চলে গিয়েছিল তাদের ভূমি পি-ও ১৬/৭২ বলে পবরত্যাক্ত ভুমি হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং ঐ জমি সরকারের নিয়ন্ত্রাধীন হয়।
এই শ্রেণীর মালিকদের ভূমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।

(ঝ) যে সকল ভূমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর দীর্ঘদিন যাবৎ অনাদায় রয়েছে অথবা মারফতদার কর্তৃক খাজনা বা কর পরিশোধ হয় তহশীল অফিসে ইহার কারণ অনুসন্ধান করলে ভূমির প্রকৃত স্বত্বাধিকারী এবং ইহার অবস্থা কি তা সহজেই জানা যাবে।

(ঞ) তাছাড়া ভূমির খাজনা বা উন্নয়ন কর অপরিশোধিত থাকলে নিলামে খাস হওয়ার সন্দেহের অবকাশ থাকে। সুতরাং তহশীলে খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।

(ট) টেস্ট একুইজিশন এন্দ টেন্যান্সস এ্যাক্টের ৯৭ ধারা অনুযায়ী কোন আদিবাসীর ভূমি অনুরুপ আদিবাসী ব্যতিত কেহ ক্রয় করতে চাইলে বা অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে চাইলে দলিলে রেজিস্ট্রি করার পূর্বে রেভিনিউ অফিসারের লিখিত সম্মতি লইতে হবে যাহা দলিলে উল্লেখ করতে হবে। এই বিধান লংধন করলে ভূমি ক্রয় বা হস্তান্তর বাতিল হয়ে যাবে। 

(ঠ) প্রেসিডেন্ট আদেশ নং ৯৮/৭২ অনুযায়ী, ১৩-৪-৮৪ তারিখ পর্যন্ত কোন পরিবার ১০০ বিঘার অতিরিক্ত ভূমি এবং (অধ্যাদেশ ১০/৮৪) ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ৪ ধারা অনুযায়ী যে সকল মালিক বা পরিবারের ৬০ বিঘার নিন্মে অথবা ৬০ বিঘা পর্যন্ত ভূমি ছিল তারা উক্ত অধ্যাদেশ জারীর তারিখ হতে (অধ্যদেশ ১০/৮৪ জারীর তারিখ ১৪-৪-৮৪ ইং, বাংলা ১লা বৈশাখ ১৩৯১) ৬০ বিধার অতিরিক্ত ভুমি ক্রয় বা অন্যবিধ উপায়ে অর্জন করতে পারবেন না।
উক্ত আদেশ ো অধ্যাদেশ লংঘন করে যদি কোন মালিক বা পরিবার উপরোক্ত সীমার অতিরিক্ত ভূমি ক্রয় করেন তাহলে এরুপ অতিরিক্ত ভূমি সরকারের বরাবরে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। 

(ড) দলিলে খতিয়ানের মালিকদের নাম ভায়া দলিল থাকলে উহার নম্বর দাতা গ্রহীতা ইত্যাদির বৃত্তান্ত দলিলে উল্লেখ্য থাকা একান্ত আবশ্যক।

(ঢ) দলিলের তফসীলে জেলা, থানা, মৌজা, খতিয়ান, দাগ, ভূমির মোট পরিমাণ এবঙ কাত যদি থাকে এবং চৌহদ্দি শহরের ভূমি হলে রাস্তা পৌর নম্বর থাকলে উহা সহ্য তদস্থিত দালান-কোঠা যদি থাকে হবে সঠিকভাবে উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন।